কম্পোজিট ফিলিং” (Composite Filling) হলো একটি দাঁতের চিকিৎসা পদ্ধতি যেখানে দাঁতের ক্ষয় বা ভাঙা অংশ পুনরুদ্ধার করতে কম্পোজিট রেজিন নামক এক ধরনের প্লাস্টিক ও কাচের মিশ্রণ ব্যবহার করা হয়। এটি দাঁতের প্রাকৃতিক রঙের সাথে মিলে যায়, তাই এটি বেশিরভাগ সময় সামনের দাঁতের জন্য ব্যবহৃত হয়, যেখান থেকে ফিলিং দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

কম্পোজিট ফিলিং এর উপাদান (Materials of Composite Filling):
কম্পোজিট ফিলিং একটি আধুনিক ও প্রসিদ্ধ দাঁতের ফিলিং উপাদান, যা মূলত প্লাস্টিক এবং কাঁচের মিশ্রণ দ্বারা তৈরি। এর প্রধান উপাদান হলো কম্পোজিট রেজিন, যা একটি সিনথেটিক (কৃত্রিম) পলিমার বেসড উপাদান। এটি দন্ত চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয় দাঁতের গহ্বর পূরণ বা ভাঙা দাঁত মেরামতের কাজে।
কম্পোজিট ফিলিং-এর মূল উপাদানসমূহ হলো:
- রেজিন ম্যাট্রিক্স (Resin Matrix): এটি সাধারণত বিস-জিমা (Bis-GMA) বা ইউরেথেন ডাইমেথাক্রিলেট (UDMA) নামক প্লাস্টিক বেসড উপাদান দিয়ে তৈরি। এটি উপাদানটিকে নমনীয় এবং দাঁতের গর্তে সহজে স্থাপনযোগ্য করে তোলে।
- ফিলার পার্টিকেল (Filler Particles): সাধারণত কোয়ার্টজ, গ্লাস, সিলিকা প্রভৃতি কণা ব্যবহার করা হয়। এগুলি উপাদানকে শক্ত করে তোলে এবং পরিধান প্রতিরোধ করে।
- কাপলিং এজেন্ট (Coupling Agent): সাইলেন (Silane) নামক উপাদান ফিলার কণার সাথে রেজিনের বন্ধন মজবুত করে।
- ফোটো ইনিশিয়েটর (Photo-initiator): এটি লাইট কিউরিং পদ্ধতিতে ব্যবহৃত হয়, যা আলো দিয়ে কম্পোজিটকে শক্ত করে।
এই উপাদানসমূহের সমন্বয়ে তৈরি কম্পোজিট ফিলিং দাঁতের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রক্ষা করে এবং কার্যক্ষমতাও বজায় রাখে।
কম্পোজিট ফিলিং এর প্রক্রিয়া (Composite Filling Procedure):
কম্পোজিট ফিলিং একটি সাধারণ ও কার্যকরী ডেন্টাল চিকিৎসা পদ্ধতি, যা দাঁতের ক্ষয়, ফাঁকা বা ভাঙা অংশ মেরামতের জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি একটি টুথ-কালারড রেজিন (resin) দিয়ে তৈরি হয়, যা প্রাকৃতিক দাঁতের রঙের সাথে মিলে যায় এবং সৌন্দর্য বজায় রাখে।
প্রথমে, ডেন্টিস্ট আক্রান্ত দাঁতের অবস্থা মূল্যায়ন করেন এবং যদি প্রয়োজন হয়, স্থানীয়ভাবে অ্যানেসথেসিয়া দিয়ে দাঁতটি অসাড় করে তোলা হয়। এরপর ক্ষয়প্রাপ্ত বা নষ্ট অংশটি ড্রিলের মাধ্যমে পরিষ্কার করে ফেলা হয়। দাঁতটি পরিষ্কার ও শুকনো করার পর তাতে একটি এসিডিক জেল ব্যবহার করা হয়, যাতে কম্পোজিট উপাদান দাঁতের সাথে ভালোভাবে আটকাতে পারে। তারপর কম্পোজিট রেজিন স্তরে স্তরে প্রয়োগ করা হয় এবং প্রতিটি স্তর একটি বিশেষ কিউরিং লাইট দিয়ে শক্ত করা হয়।
শেষে, ফিলিংটি সঠিক আকারে গঠন ও পালিশ করা হয় যাতে এটি প্রাকৃতিক দাঁতের মতো দেখায় এবং স্বাভাবিকভাবে কামড়াতে সুবিধা হয়। এই পদ্ধতিটি দ্রুত, নিরাপদ এবং বেশিরভাগ সময় একটি সেশনেই সম্পন্ন হয়। কম্পোজিট ফিলিং দাঁতের সৌন্দর্য এবং কার্যকারিতা উভয়ই বজায় রাখতে সহায়তা করে।
কম্পোজিট ফিলিং এর উপকারিতা (Benefits of Composite Filling):
কম্পোজিট ফিলিং আধুনিক ডেন্টাল চিকিৎসায় একটি জনপ্রিয় পদ্ধতি, যা দাঁতের নানাবিধ সমস্যার সমাধানে ব্যবহৃত হয়। এর প্রধান উপকারিতা হলো, এটি দাঁতের প্রাকৃতিক রঙের সাথে মিলে যায়, ফলে এটি বাইরে থেকে আলাদা করে চেনা যায় না। তাই এটি সামনের দাঁতের জন্য খুবই উপযুক্ত।
একটি বড় সুবিধা হলো, কম্পোজিট ফিলিং দাঁতের গঠনকে সংরক্ষণ করে। প্রচলিত অ্যামালগাম ফিলিংয়ের তুলনায় এতে দাঁতের কম অংশ কাটতে হয়, ফলে প্রাকৃতিক দাঁতের বেশি অংশ অক্ষত থাকে। এটি দাঁতের সাথে রসায়নগতভাবে যুক্ত হয়, যার ফলে ফিলিং সহজে আলগা হয় না এবং দাঁতের গায়ে একটি সুরক্ষামূলক বন্ধন তৈরি করে।
কম্পোজিট ফিলিং বহুমুখীভাবে ব্যবহার করা যায় — শুধু ক্ষয় নয়, দাঁতের ভাঙা কোণা, ফাঁকা অংশ বা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা মেরামতের জন্যও এটি উপযোগী। এছাড়াও, এটি দ্রুত সম্পন্ন করা যায় এবং একাধিক স্তর প্রয়োগ করে ফিলিংয়ের শক্তি ও স্থায়িত্ব বাড়ানো যায়।
অবশেষে, কম্পোজিট ফিলিং তাপমাত্রা বা খাবারের প্রতি অতিমাত্রায় সংবেদনশীল নয়, ফলে এটি দীর্ঘস্থায়ী আরাম এবং কার্যকারিতা প্রদান করে। এজন্যই এটি অনেক রোগীর প্রথম পছন্দ হয়ে উঠেছে।
কম্পোজিট ফিলিং এর অপকারিতা (Disadvantages of Composite Filling):
যদিও কম্পোজিট ফিলিং অনেক সুবিধা প্রদান করে, তবুও এর কিছু অপকারিতা রয়েছে, যা বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন। প্রথমত, কম্পোজিট ফিলিং তুলনামূলকভাবে অন্যান্য ফিলিং যেমন অ্যামালগাম ফিলিং এর চেয়ে কম টেকসই হতে পারে, বিশেষ করে বড় ক্ষয়যুক্ত দাঁতের ক্ষেত্রে। এটি চিবানোর সময় বেশি চাপ পড়লে সহজে ক্ষয়প্রাপ্ত বা ভেঙে যেতে পারে।
দ্বিতীয়ত, এই ফিলিং অন্যান্য ফিলিং উপাদানের তুলনায় তুলনামূলক বেশি ব্যয়বহুল এবং সময়সাপেক্ষ। একটি দাঁতে স্তরে স্তরে ফিলিং বসাতে সময় লাগে এবং প্রতিটি স্তর আলাদাভাবে কিউরিং লাইট দিয়ে শক্ত করতে হয়, যা পুরো প্রক্রিয়াটিকে দীর্ঘ করে তোলে।
আরেকটি সাধারণ সমস্যা হলো, কম্পোজিট ফিলিং সময়ের সাথে সাথে রঙ পরিবর্তন করতে পারে, বিশেষ করে চা, কফি বা তামাকজাত দ্রব্য সেবনের ফলে। এতে দাঁতের রঙে অসামঞ্জস্যতা দেখা দিতে পারে।
তাছাড়া, কখনো কখনো ফিলিংয়ের নিচে সংবেদনশীলতা বা হালকা ব্যথা অনুভূত হতে পারে, বিশেষ করে ঠান্ডা বা গরম খাবারে। এই সংবেদনশীলতা সময়ের সঙ্গে কমে গেলেও, কিছু ক্ষেত্রে অতিরিক্ত চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে।
সব মিলিয়ে, উপকারিতার পাশাপাশি কম্পোজিট ফিলিংয়ের কিছু সীমাবদ্ধতা থাকলেও, সচেতন ব্যবহারে এটি বেশ কার্যকর।
কম্পোজিট ফিলিং এর খরচ (Cost of Composite Filling in Bangladesh):
বাংলাদেশে কম্পোজিট ফিলিং একটি সাধারণ ও জনপ্রিয় ডেন্টাল চিকিৎসা পদ্ধতি হলেও এর খরচ বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভর করে। যেমন – ফিলিংয়ের পরিমাণ, দাঁতের অবস্থান, চিকিৎসা কেন্দ্রের মান, চিকিৎসকের অভিজ্ঞতা এবং ব্যবহৃত উপকরণের মান ইত্যাদি।
সাধারণভাবে, একটি দাঁতের কম্পোজিট ফিলিংয়ের খরচ ১,০০০ টাকা থেকে শুরু করে ৫,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। শহরভেদেও এই খরচ পরিবর্তিত হতে পারে। ঢাকায় বা অন্যান্য বড় শহরের প্রাইভেট ডেন্টাল ক্লিনিকে এই খরচ তুলনামূলকভাবে বেশি হয়, যেখানে আধুনিক প্রযুক্তি ও উন্নত মানের উপকরণ ব্যবহার করা হয়। অন্যদিকে, সরকারী হাসপাতাল বা ছোট শহরের ক্লিনিকে খরচ কিছুটা কম হতে পারে।
কম্পোজিট ফিলিংয়ে যেহেতু দাঁতের রঙের সাথে মিল রেখে অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে কাজ করতে হয় এবং একাধিক স্তর প্রয়োগ করতে হয়, তাই এতে সময় ও দক্ষতা বেশি লাগে, যা খরচ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।
তবে, দীর্ঘমেয়াদে দাঁতের সৌন্দর্য ও কার্যকারিতা বজায় রাখতে চাইলে এই খরচকে সাশ্রয়ী বলেই ধরা যায়। অনেক ক্লিনিকে নিয়মিত ছাড় বা প্যাকেজ অফারও দেওয়া হয়, তাই চিকিৎসা শুরুর আগে খরচ সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
আমাদের ঠিকানা (Our Address):
এইচআরটিডি ডেন্টাল সার্ভিস…সেকশন-৬, ব্লক- খ, রোড-১, প্লট- ১১, মেট্রোরেল -পিলার-২৪৯, আব্দুল আলী মাতবর ম্যানশন, ফলপট্টি মসজিদ গলি, মিরপুর-১০, গোলচত্বর, ঢাকা-১২১৬. যোগাযোগ: 01797522136, 01987073965, 01784572173 .